দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার মান ও প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে তাঁদের চাহিদানুসারে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠিকে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাঁদের মেধা শ্রম কাজে লাগিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করে দেশের উন্নয়ন করাই এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
বাংলাদেশ ঘনবসতি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগপূর্ণ উন্নয়নকামী একটি দেশ । বিশ্ব স্বাস্থ্য (WHO) এর মতে বাংলাদেশের মোট জন সংখ্যার ১০% লোক কোন না কোন ভাবে প্রতিবন্ধী এবং বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন হেতু বাংলাদেশ ঝুকিপূর্ণ হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, মহামারি ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার লোক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হচ্ছে । শুধু ভিটামিন “এ” এর অভাবে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু অন্ধত্বসহ নানান ধরনের প্রতিবন্ধীত্বের স্বীকার হয়। তাছাড়া প্রতিদিন শত শত লোক সড়ক, নৌ, ট্রেন দূর্ঘটনা এবং রাজনৈতিক সংহিসতায় প্রতিবন্ধী হচ্ছে।এসকল প্রতিবন্ধীগন এখনো পরিবার, সমাজের অপরের করুনার পাত্র তথা দেশের বোঝা হিসেবে দুর্বিসহ জীবন ধারন করে আসছে। এ বিশাল জনগোষ্টিকে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত না করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-ণিরীক্ষায় প্রমানিত হয়েছে প্রতিবন্ধীগণকে তাঁদের শারীরিক যোগ্যতা অনুসারে সাধারণ শিক্ষাসহ কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করলে তাঁরাও পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে তাঁদের মেধা, শ্রম, কাজে লাগিয়ে দেশের প্রভুত উন্নয়ন সাধন করতে পারে।
১৯৫৫-৫৬ সালে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের ০৫ টি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। প্রতিঠিত বিদ্যালয় সমূহে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণের নিমিত্ত ১৯৬৯ সালে আ্যামেরিকান সোসাইটি ফর দি ব্লাইন্ড এর সহায়তায় এ দেশে সরকারি পর্যায়ে সর্বপ্রথম একটি হস্ত চালিত মেকানিক্যাল ব্রেইল প্রেস স্থাপন করা হয়। আলোচ্য প্রেসটি দীর্ঘ দিন চালু না থাকায় প্রেসের সকল যন্ত্রপাতি অকোজা হয়ে পড়ে। এ দিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার মান ও পরিমান বৃদ্ধি কল্পে সরকার ১৯৯১ সালে প্রতিটি জেলা শহরে ০১ টি করে মোট ৬৪ টি সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহন করে। এ বর্ধিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্য পুস্তক সরবরাহ নিশ্চিত কল্পে ১৯৯১-১৯৯৫ মেয়াদে একটি আধুনিক ব্রেইল প্রেস স্থাপনের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কৃত্রিম অংগ প্রত্যংগ উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। যা বর্তমানে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল প্রেস ও কৃত্রিম অংগ উৎপাদন কেন্দ্র” নামে টংগীস্থ ইআরসিপিএইচ কেন্দ্রাভ্যান্তরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে।
প্রকল্পাধীনে সরবরাহ ও পরির্দশন অধিদফতরের আওতায় মেসার্স র্যাংগস লিঃ এর মাধ্যমে নরওয়ে হতে ডজ মুডের ০১ টি ব্রেইল প্রেস আমদানী করা হয়। উক্ত ব্রেইল প্রেসের উপযুক্ত ব্রেইল সফ্ট অয়্যারের অভাব থাকলেও স্থানীয়ভাবে সফ্ট অয়্যার তৈরী করে দীর্ঘ দিন এ প্রেসের মাধ্যমে ব্রেইল পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চাহিদানুসারে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্য পুস্তক সরবরাহ হয়ে আসছিল। কিন্তু সমগ্র বিশ্বে ইলেকট্রনিক্সের আধুনিকায়নে ডজ মুডের পরিবর্তে উইন্ডোজ মুড চালু হওয়ায় যন্ত্রপাতি সমুহ পরিচালনায় সহযোগি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের অভাবে প্রেসটি চালু রাখা সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণে সরকারী পর্যায়ের একমাত্র ব্রেইল প্রেসটি বন্ধ হওয়ার উপক্রমকালে সাইট সেভার’স এর মাধ্যমে ওয়ান টাইম ব্যবহার যোগ্য ০১ টি ব্রেইল প্রিন্টার ব্রেইল প্রেসে স্থাপিত হয়। এ প্রিন্টারের মাধ্যমে ২০১২ ও ২০১৩ শিক্ষা বর্ষে ব্রেইল পাঠ্য পুস্তকের কতিপয় চাহিদা মেটানো হয়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা অধিদফতর বিভিন্ন স্থান হতে ব্রেইল প্রিন্টার সংগ্রহ করে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কতিপয় ব্রেইল পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণ করে ০১ জানুয়ারী -২০১৫ মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর মাধ্যমে সুস্থ্য স্বাভাবিক শিক্ষাথীদের বই উৎসবের দিনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় এটুআই প্রকল্প আওতায় ০৩ টি ওয়ান টাইম ব্যবহারযোগ্য ব্রেইল প্রিন্টার প্রদান করেছেন। এসকল প্রিন্টারের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ২০১৬ শিক্ষা বর্ষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের চাহিদাকৃত ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ করা হয়েছে।